Header Ads

রিজার্ভেশন বিরোধিতা ও কিছু কূট প্রশ্নের উত্তর || প্রবীর মজুমদার

 



    রিজার্ভেশন নিয়ে কমরেড চিরদীপ সোম কিছু কূটপ্রশ্ন উত্থাপন করেছেন। প্রশ্নের সংগে জ্যামিতির একস্ট্রার মতন কিছু কটু মন্তব্য করার সুযোগও হাতছাড়া করেননি। তাঁর এই কটুকাটব্যে কোনও খাদ নেই, সখেদে তিনি অন্তরের গভীর থেকে জাতিগত বিদ্বেষ উগরে দিয়েছেন। নিজের স্বপক্ষে যুক্তিও সাজিয়েছেন চমৎকার। বলা যায় জেনারেল কাস্টের জনজাতির মুখপাত্রের ভূমিকায় অবতীর্ণ করেছেন নিজেকে। তাঁকে ধন্যবাদ জানাই এই জন্যেই যে, তাঁর লেখনীর মধ্যে দিয়ে তথাকথিত "নীচু জাতের মানুষ" সম্পর্কে জেনারেল কাস্টের জেনারেল মনোভাব ফুটে উঠেছে-- ফুটে উঠেছে জেনারেল কষ্ট স্পষ্টভাবেই। রক্তগত জাতিবিদ্বেষ যা সাধারণত ভদ্রতার মুখোশের আড়ালে অব্যক্ত রয়ে যায়, তা প্রকাশ্যে এল। প্রকাশ্যে যখন এলোই, তখন যুক্তিবাদী(?) চিরদীপবাবুর যুক্তিগুলো অকাট্য না কাটব্য, তা পর্যালোচনা করা যাক।

চিরদীপবাবুর প্রথম অভিযোগ--

"নোংরা সমাজ থেকে জাতপাত যদি উঠে যায়,  টাইটেল যদি বিসর্জন দেওয়া হয়, তাহলে তো রিজার্ভেশন সিস্টেমটাও বন্ধ হয়ে যাবে। একই সাথে জাতপাত তুলে দেবার কথা বলা,  আবার রিজার্ভেশনের স্বপক্ষে বলা একটু বেশী রকমের স্ববিরোধিতা হয়ে গেলো না? কারন জাতপাত ভাঙিয়েই তো রিজার্ভেশনের সুযোগ পাওয়া যায়।"

দলিত আন্দোলনের প্রধান লক্ষ্য সমাজকে জাতিভেদ মুক্ত করা। জন্ম নির্ভর বৈষম্যের নিরসন। জন্মের উপর নির্ভর করে পেশা নির্ধারণের মনুবাদী অগ্রাসনের অবসান ঘটানো। জোর করে আইন চাপানো যায়। চাপানউতোরকে গুঁড়িয়েও দেওয়া যায়। কিন্তু আইন না মানার প্রবণতাকে রোখা চাট্টিখানি নয়। আইনকে বোকা বানানোর রীতিই চালু হয় সেক্ষেত্রে। বাবাসাহেব আম্বেদকরের চেষ্টায় অস্পৃশ্যতা নিবারণ আইন প্রণীত হয়ে ছিল। কিন্তু সেই আইন রূপায়ণেই রয়ে গেছে শিথিলতা। ফলে লতার মতই অস্পৃশ্যতা সমাজকে জড়িয়ে আছে এখনও। সাম্প্রতিক বিভিন্ন ঘটনাবলীই তার প্রমান। বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জিতেনরাম মাজি মন্দিরে ঢোকার ফলে নাকি মন্দির অপবিত্র হয়ে যায়। সেই মন্দির আবার শোধন করার প্রয়োজন পড়ে। এটা একটা অপমান নয় কি? একজন মুখ্যমন্ত্রীর সংগে যদি এই ব্যবহার হতে পারে তাহলে সমাজে সাধারণ দলিতের অবস্থান কোথায় সহজেই অনুমেয়। দলিতের মন্দিরে প্রবেশ নিষিদ্ধ। সেক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠতে পারে, দলিত কি হিন্দু নয়? দলিত যদি হিন্দু না হয়, তাহলে দলিতের জন্য সংরক্ষণ প্রাসঙ্গিকতা হারায়। কারণ ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণ অসাংবিধানিক। বাবাসাহেব চাইতেন দলিতেরা হিন্দুধর্ম পরিত্যাগ করুক। তিনি বলতেন, 'হিন্দুতা কোনও ধর্ম নয়, ওটা একটা রোগ।' তিনি ৫০০০ সমর্থক নিয়ে নিজে বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। বর্ণহিন্দু সমাজে 'ত্রাহি মাম, ত্রাহি মাম' রব উঠেছিল সেই সময়।

ডিভাইড এন্ড রুল এটাই শাসকের নীতি। এই নীতি রূপায়ণের তাগিদে মনুঋষি শূদ্রসমাজকে ৬৭৪২ ভাগে ভাগ করেছিলেন, যাতে শূদ্ররা পরস্পর মিলিত হয়ে বিদ্রোহ না করতে পারে। ভারতীয় জনগণের ৭৫%-ই অস্পৃশ্য, নির্যাতিত। বাবাসাহেব এদের নাম দিয়েছিলেন ডিপ্রেসড ক্লাস। বাবাসাহেব “ডিপ্রেসড কাস্ট” বলেননি, এই বিষয়টা প্রণিধানযোগ্য। ক্লাস-সংগ্রামের কথা যারা বলেন তাঁরা এই বিষয়টাকে খেয়াল করবেন। বাবাসাহেব জাত ব্যবস্থার বিলুপ্তির জন্য আন্দোলন শুরু করেছিলেন। উনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার থেকেই। ৭৫% জনসংখ্যার স্বাভাবিক প্রতিনিধি হয়ে উঠলেন বাবাসাহেব। তাতেই টনক নড়ল বর্ণহিন্দুদের। শুদ্রসমাজে ভাঙন ধরানোর জন্য শুরু হল ষড়যন্ত্র। তখন উচ্চবর্ণীয় হিন্দুরা ইংরেজ সরকারের বিভিন্ন উচ্চ পদগুলোতে আসীন। তাদের হাতে প্রচুর ক্ষমতা তখন। ইংরেজ শাসকের নীতিও “ডিভাইড এন্ড রুল”। উচ্চ বর্ণীয়দের স্বার্থ আর ইংরেজ শাসকের স্বার্থ পরস্পরের পরিপূরক হল। চালু হল জলচল নীতি। শিক্ষা, সম্পদ, সামাজিক সম্মান সব দিক থেকই যারা বঞ্চিত এমন প্রায় ৫৯টা জাতিকে Scheduled Caste বা তালিকা ভূক্ত জাতি বলে ঘোষণা করা হল। এরা সমাজের ১৫% জনতা। আর উপজাতি, যাদের সংখ্যা ৭.৫% তাদের নিয়ে তৈরী হল Scheduled Tribe জাতি।

শূদ্রদের বাকি ৫২.৫ ভাগকে করা হল জলচল। অর্থাৎ উচ্চবর্ণীয়রা এই ৫২.৫ ভাগ শূদ্রের ছোঁয়া জলপানে রাজি হল। Backward Caste বা OBC হল এই জলচল শূদ্ররাই। জলচল হয়ে এরা আনন্দে আপ্লুত হল। ভাবতে শিখল তারা SC, STর থেকে উঁচুতে অবস্থান করছে। জলচল হলেও OBCদের শিক্ষা, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার কিন্তু বদল হল না। তাদের অবস্থা হল ত্রিশংকুর মত। না ঘরকা না ঘাটকা।

শূদ্র ভোট ভাগ করে বর্ণহিন্দুদের রাজনৈতিক দল OBC ভোট নিজেদের পক্ষে নিয়ে এল। কিন্তু কেন? মুসলিম লিগের বিরুদ্ধে হিন্দু ভোটকে সংহত রাখার স্বার্থে চিরতা গিলতে বাধ্য হয়েছিল তারা। হিন্দুভোট সংহত না রাখতে পারলে সংখ্যালঘু ব্রাহ্ম্যণ্যবাদী নেতারা ক্ষমতার ধারে কাছে আসতে পারত না। আম্বেদকরের আন্দোলন থেকে অপেক্ষাকৃত অগ্রসর শূদ্রদের জলচল করা একটা বড় রাজনৈতিক চাল তাতে কোনও সন্দেহ নেই।

SC, ST, OBC সবাই যদি বাবাসাহেবের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বৌদ্ধ হত তাহলে তাদের দুটো সুবিধা হতে পারত। এক, হিন্দুধর্মের জাতি ব্যবস্থা থেকে মুক্তি পেত। দুই, সংখ্যা গরিষ্ঠ হয়ে দেশে শূদ্ররাজ শুরু হতে পারত। সেক্ষেত্রে আর সংরক্ষণের প্রয়োজন পড়ত না। সংরক্ষণে শূদ্রের মুক্তি নেই। তহলে সংরক্ষণকে টিকিয়ে রাখা হয়েছে কেন? কারণ, "ডিভাইড এন্ড রুল"। সংরক্ষণের অছিলায় শূদ্রসমাজকে SC, ST, OBC তে বিভাজিত করে শূদ্ররাজের সম্ভাবনাকে ঠেকানো হয়েছে। অর্থাৎ শূদ্রকে সংরক্ষণ দেওয়া বর্ণ হিন্দুদের বাধ্যবাধকতা। জাতিভেদ হল হিন্দুধর্মের ভিত্তি। এই ভিত্তি টলে যাক বর্ণহিন্দুরা চায় না। সংরক্ষণ নামক উচ্ছিষ্ট দিয়েই শূদ্রকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা চলছে। সংরক্ষণ ব্যবস্থা কি তাহলে বিলোপ করা উচিত? না। কারণ সংরক্ষণ অবলুপ্ত হলে জাতিগত পরিচয় দেখে দলিতকে বঞ্চিত করা হবে না তার কোনও গ্যারান্টি নেই। শূদ্র সে যতই উপযুক্ত হোক কখনওই সে উচ্চপদে বসার যোগ্য নয়-- মনুবাদী এই তত্ত্বই তখন কর্মস্থলে প্রাধাণ্য পাবে।

চিরদীপবাবু মন্তব্য করেছেন, "রিজার্ভেশন মানে গুনমানের সাথে আপোষ করা।" তাই কি? উচ্চ শিক্ষার প্রবেশিকার সময় কিংবা কর্মক্ষেত্রের নিয়োগ পরীক্ষায় সংরক্ষণ আছে। কিছু আসন সংরক্ষিত রাখা হয় শূদ্রদের জন্যে। কিন্তু ডিগ্রি, মাস্টারডিগ্রির ফাইনাল পরীক্ষার সময় সবাইকেই একই প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দিয়ে পাশ করতে হয়। তখন শূদ্রের জন্যে পাশ মার্ককে কমিয়ে দেওয়া হয় না। একই মানদণ্ডে মাপা হয় রিজার্ভড আর জেনারেল সমস্ত ক্যান্ডিডেটকেই। তাহলে গুণমানের সাথে আপোষ হল কোথায়? চাকরির পরীক্ষায় কিছু আসন শূদ্রদের জন্যে বরাদ্য থাকলেও কাজ করার সময় কোনও সংরক্ষণ নেই। ট্রেনের চালকদের কথাই ধরা যাক। সংরক্ষিতই হোক বা অসংরক্ষিত, প্রতি চালককেই নির্ভুল ভাবে নিজের কাজ করতে হবে। ভুল হলেই শাস্তি। শাস্তির ক্ষেত্রে সংরক্ষিত না অসংরক্ষিত তা দেখা হয় না। রেলের সব পদাধিকারীর ক্ষেত্রেই একই কথা প্রযোজ্য। সমস্ত চাকরিতেই একই ব্যবস্থা। যে সব সংরক্ষিত পড়ুয়া পিএইডি করছে থিসিস লিখেই তারা ডক্টরেট পায়। তাহলে দেখা যাচ্ছে সংরক্ষণ থাকলেও গুণমানের ক্ষেত্রে আপোষ নেই। তবু দুর্ঘটনা ঘটছে। ভুল চিকিৎসায় মানুষ মরছে। এর জন্য কি সংরক্ষণ দায়ি? সিদ্ধান্তে আসার আগে দেখে নেওয়া যাক সাম্প্রতিক অতীতে ঘটে যাওয়া বিবেকানন্দ সেতু দুর্ঘটনায় কারা অভিযুক্ত।
জাতি নির্ভর রিজার্ভেশন ছাড়াও অন্য ধরণের রিজার্ভেশন চালু আছে। এবার তার কথা বলি। হাতে টাকা থাকলে মেডিক্যাল বা ইঞ্জিনিয়ারিং-এর আসন কেনা যায়। বেসরকারী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ কিংবা এমবিএ কলেজে ভর্তী হতে যোগ্যতা মাপকাঠি নয়, দরকার বিপুল পরিমান ফি দেবার ক্ষমতা।  আনন্দবাজার পত্রিকার ই-ভার্সানে প্রকাশিত সোমা মুখোপাধ্যায় ও তিয়াষ মুখোপাধ্যায়ের প্রতিবেদন “র‌্যাঙ্ক চুলোয়, কড়ি ফেললেই ডাক্তার” এই ক্ষেত্রে প্রণিধান যোগ্য। জয়েন্টে র‍্যাঙ্ক না হলেও স্রেফ টাকার জোরে ডাক্তারিতে পড়ার সুযোগ পাওয়া যায়। ঐ প্রতিবেদনে বেঙ্গালুরুর কলেজের কথা বলেছে যেখানে কোর্স ফি পৌনে ছ’লাখ টাকা। ক্যাপিটেশন ফি ৩৬ লাখ। যারা ক্যাপিটেশন ফি দিয়ে ডাক্তারী কিংবা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে তাদের মেধা নিয়ে তো কোনও প্রশ্ন ওঠে না। সাধারণ নিম্নজাতির জনতার আর্থিক ক্ষমতা নেই সেখানে থই পাবার। অর্থবান শ্রেণীর অযোগ্য সন্তানেরাই সেখানে পড়তে যায়। এটাও একধরণের রিজার্ভেশন। এছাড়াও জয়েন্ট, আইআইটি—এই সবের প্রবেশিকার প্রস্তুতির জন্যে যে সব টিউটোরিয়াল হোমগুলো রয়েছে সেখানে পড়বার সুযোগ কয় জনের হয়? যারা সেখানে পড়বার সুযোগ পায় তারা তো প্রস্তুতিতেই অনেক যোজন এগিয়ে রইল। তাদের সঙ্গে নিম্ন মধ্যবিত্ত বা দরিদ্র পরিবারের পড়ুয়াদের পেরে ওঠা যথেষ্টই কষ্ট কর। তফশীলি বা অদিবাসী পড়ুয়াদের বেশির ভাগই প্রবেশিকা পরীক্ষার জন্য উন্নত মানের শিক্ষা পায় না। কারণ তারা শুধুমাত্রই সরকারী স্কুলের লঙরখানা মার্কা শিক্ষার উপরই নির্ভরশীল। অর্থ নির্ভর এই ব্যবস্থায় কি গুণমানের সঙ্গে আপোষ করা হচ্ছে না? জাতগুণে গুণীদের পক্ষ থেকে কিন্তু এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে কোনও অবজেকশন ওঠে না। অবজেকশন ওঠে শুধু নিম্নজাতির রিজার্ভেশনের ক্ষেত্রেই। বাহ্‌ চমৎকার!!!

সংরক্ষণে যদি গুণমানের ক্ষেত্রে আপোষই করা হয়, তাহলে যেখানে সংরক্ষণ নেই সেখানে অসংরক্ষিত গুণীরা কেন কৃতিত্ব দেখাতে পারে না? খেলার জগতের দিকে তাকানো যাক। অলিম্পকে সংরক্ষণ নেই। কটা অলিম্পিক পদক অসংরক্ষিত গুণিজনেরা আনতে পেরেছে? অলিম্পিকের আসরে যারা ভারতের মান বাঁচিয়েছে তাদের সিংহভাগই শূদ্র সমাজ উদ্ভূত।

১৯৮০ সালে প্রকাশিত মণ্ডল কমিশনের রিপোর্ট অনুসারে দেশের সম্পদের ৯০ ভাগের মালিক বর্ণহিন্দুরা, অথচ তাদের সংখ্যা মাত্র ১৫ ভাগ। বর্ণহিন্দুদের মাত্র ১% দরিদ্র। শূদ্র ও সংখ্যালঘু মিলিয়ে ৮৫% মানুষের হাতে মাত্র ১০% সম্পদ। ১৫% উচ্চবর্ণীয়র হাতে দেশের ৯২% জমি। ১৫% উচ্চবর্ণের মানুষের হাতে ১৫% জমিই থাকবার কথা। কিন্তু তা নয়। অর্থাৎ নিচুজাতির পাপ্য জমি ভোগ করছে উচ্চ বর্ণের মানুষেরা। সংরক্ষণ যদি বৈষম্যের কারণ হয়, তাহলে জমির এই অসম বন্টন কি বৈষম্য নয়? অস্ত্রের বলে, ধর্মের বলে, মনুসংহিতার বিধানবলে উচ্চবর্ণীয়রা নিচুজাতির মানুষের থেকে যে জমি ছিনিয়ে নিয়ে ছিল, সেই জমি কেন এখন তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হবে না? চাকরির ক্ষেত্রে রিজার্ভেশন যাদের চক্ষুশূল তাঁরা এই জমির অসমবন্টনের বিরুদ্ধে রা কাড়েন না কেন? সংরক্ষণ যদি বাতিল করতে হয় তাহলে জাতিভেদ প্রথা নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি জমিরও সমবন্টন করতে হবে। এই বৈষম্য হাজার হাজার বছরের শোষণ ও অবিচারের ফল।

আমরা জানি পার্লামেন্ট আর বিধানসভাগুলোই ক্ষমতার উৎস। ১৫% বর্ণহিন্দু আইনসভার ৬৬% দখল করে আছেন। মনুবাদী রাজনৈতিক দলগুলো (কমিউনিস্ট সহ) অসংরক্ষিত আসনে নিম্নবর্ণের প্রার্থীকে দাঁড় করায় না, তাকে সংরক্ষিত আসনে দাঁড় করায় নেহাত বাধ্য হয়েই। সংরক্ষিত আসন না থাকলে নিম্নবর্ণের মানুষকে তারা নোমিনেশনই দিত না। ফল স্বরূপ ৮৫% নিম্নজাতি এবং সংখ্যালঘুর আইনসভায় প্রতিনিধি মাত্র ৩৪%। এটা কি বৈষম্য নয়? ৮৫% এর ৮৫%ই প্রতিনিধি হওয়ার কথা। উচ্চবর্ণীয়রাই নোমিনেশন দেয়, তাই রাজনীতির ক্ষেত্রে এই বৈষম্য রয়েছে।  

ভারতের সমস্ত উচ্চপদের (গ্রুপ-এ) ৭৫%ই উচ্চবর্ণজাতদের দখলে। মানলাম, তাঁরা তাদের যোগ্যতাতেই ঐ পদে আসীন হয়েছেন। উচ্চপদেই দুর্নীতি বেশি। তাহলে সিদ্ধান্ত কী নিতে হয়? স্বাধীনতার পর থেকে যতগুলো আর্থিক কেলেংকারী হয়েছে সেগুলোই প্রমাণ দেয়, দুর্নীতির কাণ্ডারীদের সিংহভাগই উচ্চবর্ণজাত। তাহলে ভারতের দুরবস্থার জন্য দায়ি কারা? এখানে একটা দুর্নীতির তালিকা দিলাম। সেই সঙ্গে রইল অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বর্ণ-পরিচয়।

* Coal scandal = $40 billion (Upper caste)
* Vodafone tax Scandal = $1.9 billion (Upper caste)
* Saradha Group scandal = $4 billion(Upper caste)
* IGI Airport scandal = $32 billion(Upper caste)
* Granite scandal in Tamil Nadu – $2.8 billion(Upper caste)
* Maharashtra Irrigation scandal – $12 billion(Upper caste)
* Kinetic Finance scandal = $34 million(Upper caste)
* Ultra Mega Power Projects scandal – $5 million(Upper caste)
* Karnataka Wakf Board Land scandal = $39 billion(Upper caste)
* Andhra Pradesh land scandal = $20 billion(Upper caste)
* Central Excise Duty fraud = $3.82 billion(Upper caste)
* Gujarat PSU = $3.39 billion(Upper caste)
* Maharashtra stamp duty scandal = $126 million(Upper caste)
* Highway scandal = $13.97 million(Upper caste)
* Gift scandal = $100,000(Upper caste)
* Pulse scandal = $200,000/month(Upper caste)
* Flying Club fraud = $38 million(Upper caste)
* Kashmir Cricket Association scandal = $10 million (MC)
* Punjab paddy scandal = $3.59 million(Upper caste)
* Arvind Joshi and Tinu Joshi = $50 million(Upper caste)
* Uttar Pradesh seed scandal = $9.98 million(Upper caste)
* Obsolete French Fighter Jets = $11 billion(Upper caste)
* NHRM = $2 billion(BC)
* Goa mining scandal = $700 million(Upper caste)
* Noida Corporation farm land scandal = $40 million(SC)
* Bellary mines scandal = $3.2 billion(Upper caste)
* Kashyap EPFO scandal = $118 million(Upper caste)
* Hasan Ali Khan = $8 billion(MC)
* ISRO-Devas = $300 million(Upper caste)
* Cash-for-votes = $715,000(Upper caste)
* 2G spectrum(FC/BC/SC/ST/MC) = $6.9 billion
* Adarsh Housing Society(Upper caste)
* Commonwealth Games = $15.5 billion(Upper caste)
* LIC Housing Loan scandal = $200 million(Upper caste)
* Belekeri port = $12 billion(Upper caste)
* Lavasa = $80 million(Upper caste)
* Uttar Pradesh Food Grain = $44 billion(BC)
* APIIIC = $2 billion(Upper caste)
* IPL Cricket = $8 billion(Upper caste)
* Madhu Koda = $800 million(SC)
* UIDAI = $1 billion(Upper caste)
* Vasundhara Raje land scandal = $4.4 billion(Upper caste)
* Satyam = $1 billion(Upper caste)
* Scorpene Deal = $10 million(Upper caste)
* Natwar Singh = $10 billion(Upper caste)
* Gegong Apang PDS = $200 million(ST)
* Taj corridor = $44 million(SC)
* Ketan Parekh = $200 million(Upper caste)
* Barak Missile = $200 million(Upper caste)
* Calcutta Stock Exchange = $2 million(Upper caste)
* Cobbler scandal = $214 million(Upper caste)
* Sukh Ram = $5 million(Upper caste)
* SNC Lavalin = $10 million(Upper caste)
* Advani Hawala = $18 million(Upper caste)
* Bihar fodder = $211 million(BC)
* Bhansali = $200 million(Upper caste)
* Pickle bribes = $20,000(Upper caste)
* Telgi scandal = $4.46 billion(MC)
* JMM bribes = $59,000(ST)
* Sugar import = $130 million(MC)
* Harshad Mehta = $800 million(Upper caste)
* Indian Bank = $260 million(Upper caste)
* Bofors = $400 million(Upper caste)
* HDW commissions = $4 million(Upper caste)
* Antulay = $6 million(MC)
* Nagarwala = $1 million(Upper caste)
* Haridas Mundhra = $10 million(Upper caste)
* Kuo oil scandal = $440,000(Upper caste)
* Teja loans = $5 million(Upper caste)
* BHU = $100,000(Upper caste)
* Jeep scandal = $160,000(Upper caste)

সংরক্ষণ শুধুমাত্র শুদ্রশ্রেণীই ভোগ করে না। অন্য তিন শ্রেণিও ভোগ করে। শূদ্রশ্রেণি সংরক্ষণ পাচ্ছে মাত্র ৬২ বছর, আর অন্য তিন শ্রেণি ভোগ করছে আর্যসভ্যতার আদি লগ্ন থেকেই (বর্ণহিন্দুদের দাবি অনুসারে, অন্তত ৫০০০ বছর ধরে)। বিশেষ করে ব্রাহ্মণরাতো ১০০% সংরক্ষণ নিচ্ছে আজও। পুজারী হিসেবে ১০০% সংরক্ষণের দাবিদারই ব্রাহ্মন। নিজের বেলা আঁটিসাটি পরের বেলা দাঁত কপাটি!

চিত্রদীপবাবুর বক্তব্য:- “পৃথিবীর বহুদেশেই বর্ণবৈষম্য ছিলো। খোদ আমেরিকাতেও সাদা কালোর বিভাজন ছিলো। সেখান থেকে আজ কালো মানুষদের সমানাধিকার অর্জিত হয়েছে। কিন্তু এর জন্য কোনো রিজার্ভেশনের পথ গ্রহন করতে হয় নি আমেরিকা কে। অন্য দেশকেও না। বিজ্ঞানসম্মতভাবে সঠিক পথ অনুসরন করে তারা প্রান্তিক মানুষদের এগিয়ে নিয়ে এসেছে।  আর আমরা তা না করে দায়িত্ব এড়ানোর জন্য নীচুজাতির হাতে রিজার্ভেশনের চুষিকাঠি ধরিয়ে দিয়েছি, যা তারা মহানন্দে চুষে উঁচু জাতের সাথে 'সমান' হবার সুখস্বপ্ন দেখছে।”

চিত্রদীপবাবুর জানা নেই শুধু ভারতই নয় আরো অন্য দেশেও রিজার্ভেশন আছে। আমেরিকা, চীন, জাপানের মত দেশেও রয়েছে সংরক্ষণ ব্যবস্থা। তবে একটু ভিন্নরূপে। একে বলা হয়, Affirmative Action যার লক্ষ্য বর্ণবিদ্বেষের শিকার জনসমষ্টির জন্য সামাজিক সমতা বিধান করা।

১৯৬৫-এ রাষ্ট্র সংঘের বৈঠকে বর্ণবিদ্বেষের বিরুদ্ধে কড়া আইন তৈরী হয়। সদস্য দেশ গুলো নিজের নিজের দেশে শোষিত জাতিগুলোকে সাহায্য করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন রূপে সংরক্ষণ ব্যবস্থা চালু হয়।

ব্রাজিলে সংরক্ষণ ব্যবস্থাকে বলা হয় Vestibular. কানাডায় আছে সমান রোজগারের তত্ত্ব, যার দরুন উপকৃত হয় ওখানকার নিপীড়িত এবং সংখ্যালঘুরা। চীনে মহিলা এবং তাত্ত্বিক সংখ্যালঘুদের জন্য সংরক্ষণ আছে। ফিনল্যান্ডে সুইডিসদের জন্য সংরক্ষণ আছে। জার্মানিতে আছে জিমনাশিয়াম সিস্টেম। ইজরায়েলে Affirmative Action. জাপানের বঞ্চিত দলিত জাতি বুরাকূমিনদের জন্য আছে সংরক্ষণ। ম্যাসিডনিয়াতে আলবানিয়নদের জন্য সংরক্ষণ আছে। মালশিয়াতে সংরক্ষণ ব্যবস্থা চালু হয়েছে। নিউজিল্যাণ্ডে মাওরিস আর পলিনেশিয়ানদের জন্য Affirmative Action চালু আছে। রোমানিয়াতে শোষণের শিকার রোমানদের জন্য, দক্ষিণ আফ্রিকায় মজুরি সমতা (কালো এবং সাদাদের সমান মজুরি), দক্ষিণ করিয়াতে উত্তর কোরিয়ান এবং চীনাদের জন্য সংরক্ষণ চালু আছে। শ্রীলঙ্কায় তামিল ও খ্রিস্টানদের জন্য, সুইডেনে General Affirmative Action,আমেরিকায় General Affirmative Action রূপে সংরক্ষণ ব্যবস্থা রয়েছে।  

দেখে নেওয়া যাক Affirmative Action জিনিসটা কী। ধরা যাক দু-জন সমান যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তি একটা পোষ্টের জন্য আবেদন করেছে। তাদের একজন সাদা, আরেকজন কালো। সেক্ষেত্রে প্রথম পছন্দ হবে কালো ব্যক্তিই। এখানে বর্ণকে প্রাধান্য দেওয়া হল। এটা কী সংরক্ষণ নয়?  

1. Reservation is not a charity but a right guaranteed by the Indian Constitution.

2.Certain people enjoyed de facto reservation for thousands of years. What I mean is that only a Brahmin's son could become a priest .No one questioned that and it went for thousands of years.

3.You can easily buy a Medical/Engineering seat for lakhs of rupees.No one questions that.

4.Certain castes were oppressed for thousands of years. No one raised an eyebrow . Wearing upper cloth was exclusively "RESERVED "for certain castes.

5.According to Manu, a Brahmin should not teach a Shudra or a woman even if he dies without imparting the knowledge to anyone. Or in other words 100% reservation for 1 section of the society.

6.Rarely you will people with Caste Surnames like "Sharma.Joshi,Iyer,Iyengar,Nair,Namboodi... in slum colonies.Why is that?????Most of the landless belong to the SC & ST's .Why???
We are all hypocrites .Never practice what we preach !!!!

7.More than 2000 years of discrimination versus less than 100 years of reservation!!!

8. The people who are demanding an end to caste-based reservation should burn all the books which contain caste-ist references. The list is very long . Starting from Gita to Manu Smrithi ,all kinds of smrithis. Not to forget the fountain -head of social evil- The Purusha Sukta of Rk-Veda.

9. There was a Gandhi-Ambedkar pact ( Pune Pact )1932.The untouchables ( now SCs ) lost their separate identity to the Hindus & got some more seats on joint electorate basis in assemblies as well as reservation in govt. jobs.

https://s.yimg.com/hd/answers/i/64ad9e139f494ae8ad3e13903e2b99b5_A.jpeg?a=answers&mr=0&x=1473117840&s=8f4cad95c7e975591999a7e7b095509a

কয়েকটা প্রশ্ন করছি-

১)  নোংরা সমাজ থেকে জাতপাত যদি উঠে যায়,  টাইটেল যদি বিসর্জন দেওয়া হয়, তাহলে তো রিজার্ভেশন সিস্টেমটাও বন্ধ হয়ে যাবে। একই সাথে জাতপাত তুলে দেবার কথা বলা,  আবার রিজার্ভেশনের স্বপক্ষে বলা একটু বেশী রকমের স্ববিরোধিতা হয়ে গেলো না? কারন জাতপাত ভাঙিয়েই তো রিজার্ভেশনের সুযোগ পাওয়া যায়।

২) একটা সময় ব্রাহ্মণরা শূদ্রদের উপর অত্যাচার করেছে, তাদের শিক্ষার  অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে, ঠিক কথা। কিন্তু তার সমাধান কি রিজার্ভেশন? শূদ্রদের অযৌক্তিকভাবে বেশী সুবিধাদান?  বেশ, তাহলে একটা সময় সতীদাহ প্রথা চালু ছিলো, তার সমাধান হওয়া উচিত বর্তমানে স্ত্রী মারা গেলে স্বামীকে জীবন্ত চিতায় পুড়িয়ে মারা, তাই তো?

৩) পৃথিবীর বহুদেশেই বর্ণবৈষম্য ছিলো। খোদ আমেরিকাতেও সাদা কালোর বিভাজন ছিলো। সেখান থেকে আজ কালো মানুষদের সমানাধিকার অর্জিত হয়েছে। কিন্তু এর জন্য কোনো রিজার্ভেশনের পথ গ্রহন করতে হয় নি আমেরিকা কে। অন্য দেশকেও না। বিজ্ঞানসম্মতভাবে সঠিক পথ অনুসরন করে তারা প্রান্তিক মানুষদের এগিয়ে নিয়ে এসেছে।  আর আমরা তা না করে দায়িত্ব এড়ানোর জন্য নীচুজাতির হাতে রিজার্ভেশনের চুষিকাঠি ধরিয়ে দিয়েছি, যা তারা মহানন্দে চুষে উঁচু জাতের সাথে 'সমান' হবার সুখস্বপ্ন দেখছে।  

৪) রিজার্ভেশন মানে গুনমানের সাথে আপোষ করা- এই সহজ সত্যিটাকে কি অস্বীকার করা যাবে?  আসলে তারাই রিজার্ভেশনের পক্ষে গলা ফাটান, যারা জানেন তাদের মস্তিষ্কের গুনমান কম, তাই খোলামেলা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই রিজার্ভেশনের ঘোমটার আড়ালে বৃহন্নলার মত মুখ লুকাতে হয় তাদের।

৪) বহু নীচুজাতের মানুষ আছেন যারা অর্থনৈতিক ভাবে যথেষ্ট স্বচ্ছল।  বাড়িতে ফ্রিজ, টিভি, এসি, ওয়াশিং মেশিন সবই আছে। এই পরিবারের কি রিজার্ভেশন পাওয়া উচিত বলে মনে করেন?  যদি উত্তর হয় 'হ্যাঁ', তাহলে জানতে চাইবো কিসের ভিত্তিতে?  রিজার্ভেশন এই পরিবারের একটি ছেলের বেশী দরকার, নাকি দারিদ্রের সাথে লড়াই করে উঠে আসা একটি জেনারেল কাষ্টের ছেলের বেশী দরকার?  কোন যুক্তিকে জেনারেল কাষ্টের ছেলেটিকে বঞ্চিত করা হবে?  কোথায় কোন দু তিনশ বছর আগে তার ঠাকুর্দা কি অন্যায় করে গেছে তার ভিত্তিতে? যার সাথে সে কোনোভাবেই যুক্ত নয়?  এটা কোনো সুস্থ মস্তিষ্কে  যুক্তি?  একমাত্র শূদ্র ও শয়তানরাই পারে এমনতর যুক্তি দিতে। একমাত্র শূদ্ররাই হয় এমনতর সুবিধাবাদী,  ধান্দাবাজ, পিছনের দরজা দিয়ে উৎকর্ষের ক্ষেত্রে ঢুকতে চাওয়া পাবলিক।



ভারতে মেডিকেল কলেজ 406 টি,200 টি সরকারি যেখানে SC,ST,OBC দের সংরক্ষন আছে;206 টি বেসরকারি কলেজে SC,ST,OBC দের সংরক্ষন নেই ; বেসরকারি মেডিকেল কলেজে 50 লক্ষ থেকে 1 কোটি টাকা খরচ করে অযোগ্য ব্রাহ্মণ,কায়েত ডক্টর হয়!
বেসরকারি কলেজে যারা শুধুমাত্র টাকার জোরে ডক্টর, ইন্জিনিয়র হয় তারা সমাজের আসল বিপদ; তাদের এন্ট্রান্স না দিলেও চলে !
তার বেলায় কি করছেন? আপনার মতো সমাজ দরদী!


অস্ত্রধারণ করার কথা সমাজবিরোধীরা বলে --- ভদ্রলোকে বলেনা। ঠিক। সমাজের শ্রমিকশ্রেণির লোকদের আপনারা শূদ্র বানিয়েছিলেন অস্ত্রের জোরেই। সুতরাং আপনাদের সমাজবিরোধী বলা যায়। সংরক্ষণ তোলার কথা বলছেন? তার আগে জাতি ভেদ তুলুন, জমি সমবন্টন করুন। দেশের ৯০% জমি ভোগ দখল করছে ১৫% জেনারেল কাস্টের লোক। অর্থাৎ মূলনিবাসীদের জমি আপনাদের হাতে রয়েছে। সেই জমি ফিরিয়ে দিন। যদি না পারেন তাহলে সংরক্ষণ তোলার কথা বলবেন না। ভুলে যাবেন না, আপনারা ৫০০০ বছর ধরে সংরক্ষণ ভোগ করছেন। IITর মান নেমে যাচ্ছে বলে খুব তো কাঁঁদুনি গাইছেন, ৫০০০ বছর ধরে পড়াশুনা করার অধিকার পেয়ে আপনারা দেশকে কয়টা নোবেল এনে দিতে পেরেছেন? আপনারা জাতিভেদ সৃষ্টি করে সব ঝোল নিজেদের দিকে টেনেছেন ৫০০০ বছর ধরে। এখনো সেই অভ্যাস ত্যাগ করতে পারছেন না।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.