Header Ads

মূলধারার বাংলা সংবাদ মাধ্যমের ভূমিকা || প্রবীর মজুমদার


  


 

মূলধারার বাংলা সংবাদ মাধ্যমের ভূমিকা কী? এককথায় এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হলে বলতে হয়, এদের কাজ প্রোপাগান্ডা করা। জনমত গঠনের মহান ও দুরূহ দায়িত্ব থেকে স্বেচ্ছা অবসর নিয়েছে মূলধারার বাংলা সংবাদ মাধ্যম। পড়তে হয়, নইলে পিছিয়ে পড়তে হয়। তাই যদি হয়, তাহলে এতবড় একটা ঘটনা আপনারা চেপে গেলেন কেন? আপনাদের পত্রিকা না পড়েও জনগণ পিছিয়ে গেল না। বরং নিজেদের অধিকার রক্ষায় জনগণ নিজেরাই জনমত গঠন করে ফেলল। ভগবান ছাড়া কাউকে ভয় পায় না যারা, তারাও যে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে ভয়ে গা ঢাকা দেয়, তাও আজ প্রমাণিত। নইলে ধর্মবর্জিত সমাজের পক্ষে সওয়ালকারী ব্লগার তারক বিশ্বাস সংক্রান্ত সমস্ত খবর বাংলার সংবাদ মাধ্যম স্বেচ্ছাকৃতভাবে এড়িয়ে যায়? এমন ভাবার কারণ নেই যে, খবরটা খুবই সামান্য, প্রথিতযশা সংবাদমাধ্যম তাই এতে উৎসাহি নয়। না, ঘটনাটা মোটেই সাধারণ নয়। ঘটনাটা ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬ থেকেই সোসালমিডিয়ায় বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু। ইন্ডিয়ান পেনাল কোড-২৯৫এ ধারাটার যৌক্তিকতা নিয়েই উঠেছে প্রশ্ন। দাবি উঠেছে ঔপনিবেশিক সরকারের তৈরী এই আইন বিলোপ করার। সুতরাং ভাবা গিয়েছিল, ঘন্টাখানেক সুমনের সঙ্গ পাওয়া যাবে হয়ত। কিন্তু না। পুরো ব্ল্যাক আউট। কালিয়াচক কাণ্ড নিয়ে বাংলার মিডিয়া যেমন কুম্ভকর্ণ মার্কা অবস্থান নিয়েছিল, এক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হল না।

২০১৬-এর পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা ভোটের সময় আমরা দেখেছি, আধাসামরিক বাহিনীর কোনও সদস্য চরম দাবদাহ থেকে চোখ বাঁচানোর জন্যে রোদচশমা কিনতে দোকানে ঢুকলেও সেটা সংবাদ হয়েছিল। প্রচার করা হয়েছিল সেনা জওয়ানেরা ডিউটি ভুলে কেনা-কাটায় ব্যস্ত। ডিউটির ফাঁকে কোনও জওয়ান গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিলেও ছবি সহ প্রচার করা হচ্ছিল আধাসামরিক বাহিনী ডিউটি পালন করছে না। হনুমান তাড়ানোর জন্য একটা লোক এয়ারগান নিয়ে ঘুরছিল। সেটার ভিডিও দেখিয়ে প্রচার করা হল রাজ্যে সন্ত্রাসের আবহাওয়ায় ভোট চলছে। কোনও এক হীন উদ্দেশ্য নিয়েই যে এই রকম প্রচার চলেছিল তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
তারক বিশ্বাস হাই প্রফাইল কোনও ব্যক্তি নয়। নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলে। উপরন্তু দলিত। রাজনৈতিক ছত্রছায়াও নেই। সুতরং সংবাদ ব্যবসায়ীদের দৃষ্টিতে সে মূল্যহীন। তারক হিন্দুধর্মেরও সমালোচনা করেছিল। যদি সেই সময় কোনও হিন্দু সংস্থা ওর নামে ধর্ম অবমাননার মামলা করত তাহলে সেটা খবর হত। দলিত নির্যাতন বলে প্রচার করা যেত। সেক্ষেত্রে হিন্দুতাবাদীদের অসহিষ্ণুতা নিয়েও লম্বাচওড়া প্রতিবেদন তৈরী হতে পারত। আর তারক যদি তারিক হত আর অভিযোগকারী যদি হিন্দু হত তাহলে তো কথাই ছিল না, বুদ্ধিজীবীদের ধর্ম নিরপেক্ষ বিবেক জাগ্রত হয়ে উঠত— হয়ত শুরু হয়ে যেত পদক ফেরানোর নাটকও। এখন ভোটও নেই। তাই মেইন স্ট্রিম সংবাদ মাধ্যমে “তৃণমূলের নেতা কতৃক দলিত নিগ্রহ” শিরোনামে কোনও সংবাদও প্রকাশ পায়নি।

তবে, সংবাদ মাধ্যমের এই বন্ধ্যত্বের যুগেও নতুন এক আশার আলো দেখা যাচ্ছে। তা হল সোসাল মিডিয়া। মেইনস্ট্রিম সংবাদ মাধ্যম জনমত গঠনে আগ্রহী না হলেও আর পরোয়া নেই। আম জনতা বিকল্প খুঁজে নিয়েছে। সোসাল মিডিয়ার মধ্যে দিয়ে তারা নিজেদের দাবি-দাওয়া-ক্ষোভ প্রকাশ করছে— যা জনমত গঠনের ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা পালন করছে। আসলে, ডিজিটাল ভারতে সংবাদ ব্যবসায়ীদের আর প্রয়োজন নেই। সোসাল মিডিয়ার প্রতি সদস্যই এক এক জন সাংবাদিক। তারক বিশ্বাসের গ্রেফতারির খবর জনতা জেনেছে ফেসবুকের কল্যাণে। সেই খবর দেখেই কয়েকটা অনলাইন নিউজ পোর্টাল তারক বিশ্বাসের খবর প্রকাশ করেছে। তারক বিশ্বাস সংক্রান্ত খবরের যে কোনও আপডেট ফেসবুকের পাতা থেকে পাওয়া যাচ্ছে। শহবাগ আন্দোলন সোসাল মিডিয়ার ক্ষমতা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে।

সুতরাং সিদ্ধান্ত এটাই— এখন জনমত তৈরী করে সোসাল মিডিয়া, সংবাদ ব্যবসায়ীরা নয়। তাই যদি হয় তাহলে সংবাদ পত্র পড়ব কেন? কেনই-বা সংবাদ চ্যানেলে চোখ রাখব? মনে হয়, মেইনস্ট্রিম সংবাদ মাধ্যমকে বয়কট করার সময় এসে গেছে। সার্কুলেশন যদি কমে যায়, টি.আর.পি যদি কমে যায়, তাহলে ওদের পৃষ্টপোষক বিজ্ঞাপনদাতারাও মুখ ফিরিয়ে নেবে। তাহলে যদি ওদের ঘুম ভাঙে!

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.