Header Ads

মহম্মদবাদের ফাঁদে মনুবাদ-বিরোধ // প্রবীর মজুমদার

কোরান দেখুন। ইসলামের সৃষ্টির সময় থেকেই তারা ধর্মের নামে সতন্ত্র, যেখানে অন্য ধর্মাবলম্বীদের কোনও অধিকার নেই। মুসলিম লিগের জন্ম কত সালে? ১৯০৬. এই সালের আগে থেকেই কি মুসলিম জাতিবাদ ছিল না? আলিগড় আন্দোলন শুধু শিক্ষা আন্দোলন নয়, এটার রাজনৈতিক লক্ষ্য ছিল। এই আন্দোলন ১৮৮৬ সাল নাগাদ শুরু। জাতীয় কংগ্রেসের জন্ম ১৮৮৫. অর্থাৎ হিন্দু জাতীয়তাবাদ আর মুসলিম জাতীয়তাবাদ মোটামুটি একই সময় থেকে শুরু। কংগ্রেসের মুসলিম তোষণের ফলাফল হিসেবে এরপর হিন্দুমহাসভার জন্ম ১৯২৬-এ। ১৯২৫-এ জন্ম RSS-এর। বাবাসাহেব তাঁর Pakistan and the partition of India বইতে স্পষ্ট লিখেছেন, মুসলিমলিগ গঠনের প্রতিক্রিয়া হিসেবে উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের জন্ম। তাহলে দ্বিজাতিতত্ত্বের জন্মের জন্যে হিন্দুত্ববাদীদের দোষ কিভাবে দেওয়া যায়? মুসলিমলিগ যদি তৈরী না হত, যদি কংগ্রেস মুসলিম তাস না খেলত, তাহলে হয়ত হিন্দু মহাসভা বা RSS তৈরীই হত না। মুসলিমলিগ ভারত ভাগ করতে চেয়েছিল নিজেদের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক স্বার্থে। ইসলামিক দেশে অমুসলমানদের স্বার্থ সুরক্ষিত নয়। দলিতদের তারা মাথায় তুলে রাখবে, এমন কোনও আশ্বাস তাদের ধর্মগ্রন্থ ও শরিয়া আইনে নেই। আনেকে প্রশ্ন তোলেন, "কেন মুসলিম লিগ মুসলমানদের সংগঠন হল?" তাঁদের বক্তব্য হল, জাতীয় কংগ্রেসের হিন্দু-ঘেঁসা নীতির কারণেই না কি মুসলমানেরা নিজেদের জন্যে আলাদা দল বানিয়েছিল। তাঁদের আরো অভিযোগ, হিন্দু সংগঠন না কি সর্বগ্রাসী। সেক্ষেত্রে পালটা প্রশ্ন উঠতে পারে, মুসলমানদের সংগঠন কি সর্বগ্রাসী নয়? জন্মের থেকেই মুসলিমলিগ মুসলমানদের সংগঠন ছিল না কি? দার-উল-ইসলাম-এর মধ্যেই সর্বগ্রাসী জেহাদি মনোভাব লুকিয়ে আছে। আগেও ছিল, এখনও আছে। কবি ইকবাল লিখেছিলেন, 'হাম হে মুসলমান, হামারা এ জাহান।' (কথাটা একটু অন্য রকম হলেও মূল বক্তব্যটা এটাই)। ইকবালকে বাবাসাহেব দেশদ্রোহী বলে উল্লেখ করেছিলেন। কেন? ভেবে দেখবেন না? দেখা যাচ্ছে মনুবাদের বিরোধিতা করতে গিয়ে আমাদের অনেক নেতাই বাবাসাহেবের আদর্শ ভুলে যাচ্ছেন, অথবা হিন্দুত্ববাদীদের দোষী বানাতে গিয়ে মুসলিমলিগকে ক্লিনচিট দিয়ে দিচ্ছেন। ভারত ভাগ অনিবার্য ছিল। ভাল হত লোক বিনিময় করলে। তাহলে এত মানুষ মারা যেত না। মোল্লারা কিন্তু কাফের মারার সময় সে দলিত না উচ্চবর্ণের হিন্দু, সেই বিচার করেনি। আজও করে না। বাংলাদেশের বিভিন্ন ঘটনা তার প্রমাণ। যেসব দলিত নেতা বাংলাদেশ ছেড়ে এসেছেন মোল্লাদের উপর তাদের আস্থা থাকে কী করে? অখন্ড বাংলা যদি হত, তাহলেও কি ওখানে তাঁরা টিকতে পারতেন? বিহারী, ওড়িয়া কিংবা আসামে আসামীর মত বাঁচতে হত, যদি পশ্চিমবঙ্গ না তৈরী হত। মনুবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গেলে মহম্মদবাদের সমর্থক হতে হবে-- এমন কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। আমাদের দলিত-আন্দোলনের অনেক নেতারই মোল্লাদের প্রতি অগাধ আনুগত্য। তাঁরা মহাপ্রাণ যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডলকেই মার্গদিশারী করেছেন। তাঁরা মনে রাখতে চান না, মোল্লা-জোটসঙ্গীদের তাড়নাতে মহাপ্রাণও তাঁর সাধের পাকিস্তানে টিকে থাকার ভরসা পাননি, প্রাণ হাতে করে গোপনে সীমান্ত পেরিয়ে "মনুর পীঠস্থান" এই ভারতেরই স্মরণাপন্ন হতে হয়েছে তাঁকে। মহম্মদবাদীদের প্রতি অযথা আনুগত্য না দেখিয়েও দলিতের স্বার্থে আন্দোলন করা যায়। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য, মোল্লাদের লাথি খাওয়া নেতারাও মোল্লাদের উচ্ছিষ্টের লোভ ছাড়তে পারছেন না। এঁরা আর যাই হোন, কোনও মতেই আম্বেদকরবাদী নন। আম্বেদকর রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্যে সত্যের সঙ্গে আপোষ করেননি।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.