Header Ads

আমাদের বড়দিন নিয়ে এত মাতামাতির প্রয়োজন আছে কী? || পিকি (কাটোয়া)



কথায় বলে বাঙালির নাকি বারো মাসে তেরো পার্বণ, কিন্তু আমি যদি বলি এখন বাঙালির বারো মাসে ছাব্বিশ পার্বণ তাতেও বোধকরি দুটি একটি পার্বণ বাদ চলে যেতে পারে। এখন কথা হল বাঙালিদের বারো মাসে তেরো পার্বণ কথাটা কিন্তু শুধুমাত্র সনাতন ধর্মালম্বীদের ক্ষেত্রেই প্রযজ‍্য। কারণ ইসলামে ও খৃষ্ট সম্প্রদায়ে বিশ্বাসী বাঙালি তেরো পার্বণে বিশ্বাসী কোনো কালেই ছিলেন না কারণ ওনাদের হাতে গোনা কিছু উৎসব আচার-অনুষ্ঠান এবং ওনারা অন‍্য ধর্মের উৎসব নিয়ে এত মাতামাতিও করেননি কখন‌ও, আজ‌ও তেমন নয়। কিছু ব‍্যাতিক্রম সব জায়গাতেই থাকে, তবে সেটি শতাংশের বিচারে খুব‌ই কম তাই তাদের আমরা ব‍্যাতিক্রমী বলি। অথচ সনাতন হিন্দু ধর্মালম্বী বাঙালিরা নিজেদের তেত্রিশ কোটি দেব দেবী থাকা স্বত্বেও অন‍্য সম্প্রদায়ের উৎসব আনন্দকে বারবার আপন করে নেয়, এর অন‍্যতম কারণ হল তারা সনাতনী। কারণ সনাতন ধর্ম‌ই আমাদের শিখিয়েছে- "বসুধৈব কুটুম্বকম্" (বসুন্ধরার অর্থাৎ পৃথিবীর সব মানুষ তোমার কুটুম্ব মানে আত্মীয়)। এখন আত্মীয়ের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আনন্দ-উৎসব সবেতেই তো আমরা পাশে দাঁড়াই এটাও অনেকটা তাই। তবুও খুব কষ্ট হয় তখন, যখন দেখি "বাঙালি আত্মবিস্মৃত জাতি" কথাটা সত‍্যি করে দেয় এই প্রিয় বাঙালিরাই। খৃষ্ট জন্মদিন পালনের বিরোধী ন‌ই আমি। কিন্তু এত মাতামাতি নাচাগানা মদ্ পিনা এটাই কি আমাদের ওই উৎসব পালনের পরাকাষ্ঠা ?


প্রথমত বড়দিন শব্দেই আপত্তি আছে । ২৫শে ডিসেম্বর দিন বড় হয় না। আমরা জানি পৌষসংক্রান্তি বা মকর সংক্রান্তির দিন থেকে সূর্যের দক্ষিণায়ন থেকে উত্তরায়ণ ঘটে এবং এই দিন থেকেই প্রকৃত পক্ষে দিন বড় ও রাত ছোট অনুভব করা যায়। সূর্য ধনু রাশি থেকে মকর রাশিতে প্রবেশ করে বলেই একে মকর সংক্রান্তি বলে আর এই মকর সংক্রান্তির বাঁধাধরা ইংরাজী তারিখ হল ১৪ই জানুয়ারী। জ‍্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতে ২১শে ডিসেম্বরের পরদিন থেকে নাকি দিন বড় হয় রাত ছোট হয় সেই দিক দিয়ে বিচার করলেও ২২শে ডিসেম্বরকে বড়দিন বলা উচিৎ।

                 ১৮৮৬ সাল। কয়েকমাস আগে কাশীপুরের উদ্যানবাটিতে শ্রী শ্রী ঠাকুরের শরীরাবসান হয়েছে। নরেন প্রমুখ শিষ্যরা ঠাকুরের প্রেরণায় সংসার ছেড়েছেন। ডিসেম্বর মাস। অন্যান্য কয়েকজন গুরুভাইয়ের সঙ্গে নরেন আঁটপুরে। বাবুরাম মহারাজের বাড়িতে। ঠাকুরের কথায় যে বাবুরামের হাড় পর্যন্ত শুদ্ধ সেই ভক্তপ্রেমিক বাবুরাম মহারাজের ভিটেয় সেদিন পবিত্র ধুনি জ্বালানো হল। উদাত্ত কণ্ঠে নরেন যীশুর জীবনের ত্যাগ, তিতিক্ষা ও প্রেমের কথা পাঠ করছেন। পাঠান্তে সেই নিস্তব্ধ রাত্রিতে পবিত্র গৈরিক অগ্নিশিখাকে সাক্ষী রেখে নরেন ও তাঁর সঙ্গীরা শিবজ্ঞানে জীবসেবার মন্ত্রকে সাকার করার জন্য সন্ন্যাস ব্রত ধারণ করলেন।

কলকাতায় ফিরে কিছুদিনের সাধন ভজনের পরে সন্ন্যাসী বিবেকানন্দ ১৮৯০ সালে একটি দণ্ড ও একটি কৌপীন সম্বল করে বেরিয়ে পড়লেন ভারত ভ্রমণে। ১৮৯২ সালে সমগ্র ভারত পরিক্রমা শেষে ২৪ ডিসেম্বর উপস্থিত হলেন জগদম্বা কুমারিকার পবিত্র তপঃস্থলীতে। যেখানে একই জায়গায় দাঁড়িয়ে প্রত্যক্ষ করা যায় সমুদ্রের মাঝে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত। সাগরের উত্তাল তরঙ্গ সাঁতরে সমুদ্রের মাঝে জেগে থাকা পাথরের উপরে উঠে বসলেন। একাদিক্রমে তিন দিন পৌষমাসের প্রচণ্ড শীতে সিক্ত বসনে নির্জলা অনাহারে ধ্যানমগ্ন হয়ে ভারত মাতার বৈভবময়ী মূর্তির দর্শন করলেন। কলকাতার ইংরেজি শিক্ষিত গ্র্যাজুয়েট নরেনের নবজন্ম হল বিবেকানন্দ রূপে – যে  বিবেকানন্দ ভারতাত্মার ঘনীভূত বিগ্রহ – India Personified। সেই বিবেকানন্দ কপর্দকশূন্য অবস্থায় কেবল কেবলমাত্র ভারতবর্ষের শাশ্বত বাণীকে সম্বল করে জগতের কল্যাণের লক্ষ্য নিয়ে শিকাগোতে গর্জন করলেন। পাদ্রীদের সাবধান করলেন “তোমরা ভারতবর্ষে খ্রীষ্টমতের প্রচার বন্ধ কর। ধর্ম ও আধ্যাত্মিকতায় তোমরা এখনও আমাদের কাছে শিশু।”- আমরা কি করে এগুলো ভুলে যাই ?

এই দিনটি মদন মোহন মালব‍্যের‌ও জন্মদিন যে মহামানব কাশী হিন্দু বিশ্ববিদ‍্যালয় স্থাপন করে ভারতীয়দের পাশ্চাত‍্য অপসংস্কৃতির ছোঁয়া থেকে বাঁচাতে চেয়েছিলেন, অথচ আত্মবিস্মৃত ভারতীয় আমরা কতজন এটা পালন করি ? প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি জৈল সিংয়ের মৃত‍্যুদিন ২৫শে ডিসেম্বর‌ই। বিখ‍্যাত শিল্পী চার্লি চ‍্যাপলিন‌ও মারা যান এই দিনেই, ভারতীয় সঙ্গীত সুরকার নৌশাদের জন্মদিন এই দিনেই এছাড়াও মহান বৈজ্ঞানিক নিউটন ও বিশ্বখ‍্যাত কবি ওয়ার্ডস্ওয়ার্থ‌ ও ২৫শে ডিসেম্বরেই জন্মেছিলেন, কিন্তু সব ভুলে শুধু যীশুকে মাতি আমরা। যীশু নিসন্দেহে এই সম্মানের প্রাপক্ কিন্তু অবাক হ‌ই তখন যখন দেখি হিন্দুর ঘরে সন্ধে বেলায় তুলসী মঞ্চে জল পড়েনা প্রদীপ দেখানো হয় না। অনেক বাড়িতে গাছটাই আর নেই। অথচ সেই বাড়িতেই প্লাস্টিকের ঝাউ গাছে বল, বেল্, রঙিন আলো লাগিয়ে খ্রিস্ট-মাস পার্টি চলছে। অবাক লাগে শীতের আগেই কোনো দুস্থ দরিদ্রকে শীতবস্ত্র উপহার না দিয়ে ২৫ তারিখে দেওয়া হয় এবং পথশিশুদের প্রতি হঠাৎ মমত্ব জেগে ওঠে। চ‍্যারিটিকে মিডিয়া ডেকে নিদেনপক্ষে নিজেরাই সামাজিক গণমাধ‍্যমে দেখাতে ব‍্যাস্ত হয়ে পড়ি দেখুন আমি কত্ত মহান। যীশুর কোনো বাণীকে আদ‌ও গুরুত্ব দেওয়া হয় কি? শুধু মদের বন‍্যা বয় পার্কস্ট্রীটে। গীর্জার আহ্বান শুনি আমাদের ধর্ম মহান বাকি সব ফালতু প্রভু যীশুর স্মরণাপন্ন হোন। আপনারা বলবেন এটা মিথ‍্যা বলছি। তাহলে আমি বলছি আপনারা উত্তরপূর্বাঞ্চলের রাজ‍্যগুলিতে যান গিয়ে দেখে আসুন সেখানে কত শতাংশ লোক আর হিন্দু আছে। যেন তেন প্রকারে ধর্মান্তকরণ চলছে। জানিনা এটাও প্রভু যীশুই শিখিয়ে গেছিলেন কিনা। গণতান্ত্রিক ভারতবর্ষে এখন‌ও উত্তরে একাধিক রাজ‍্যে চার্চের অঙ্গুলিহেলনে রাজ‍্যসরকার নির্বাচিত হয়।

পৌষের পিঠে বানাতে ভুলেছে বাঙালি কিন্তু রকমারী কেক দিয়ে রসনা তৃপ্ত করতে লজ্জা লাগেনা আমাদের। কৃষ্ণের জন্মাষ্টমীতে তালের ফুলুরি আর কতজন করেন কে জানে কিন্তু যীশুবাবার বার্থ-ডে টা সেলিব্রেট করি প্রায় সকলেই। শ্রীরামের নাম নিলেই সাম্প্রদায়িক বলবে তার চেয়ে জিঙ্গল্ বেলে কোমর দোলালে রেসপেক্ট মিলবে।

আবার বিবেকানন্দ- নিবদিতাকে খাওয়ার নিমন্ত্রণ করলেন স্বামীজি। কদিন থেকেই খুব অসুস্থ প্রিয় শিষ‍্যা এলে তাকে খেতে দেওয়ার নির্দেশ দিলেন। নিবেদিতা বললেন "আপনি খাবেন না গুরুদেব?" না তুমি খাও আমি পরে খাবো। নিবেদিতার খাওয়া হলে স্বামীজি তার হাত ও মুখ ধুইয়ে দিতে গেলে নিবেদিতা লজ্জিত হয়ে বললেন "একি গুরুদেব আপনি আমার হাত ধোয়ালে আমার পাপ হবে যে"। স্বামীজি তাকে বললেন "আমাকে করতে দাও, তুমি তো আগে ক‍্যাথলিক্ ছিলে জানোনা যীশু শেষ জীবনে নিজের শিষ‍্যের পা ধুইয়ে দিয়েছিলেন"? অবাক নিবেদিতা ব‍্যাথিত হয়ে উঠলেন কারণ ওই ঘটনার পর যীশুর পরিণতি উনি জানতেন। উনি বুঝলেন স্বামীজির মৃত‍্যু স্বামীজি বুঝতে পেরেছেন। বিহ্বল কন্ঠে নিবেদিতা জিজ্ঞাসা করলেন গুরুদেব তাহলে কি......

প্রসঙ্গত উল্লেখ করি সেইদিন‌ই রাতে স্বামীজি ইহলোক ত‍্যাগ করেন।

এটা বলার উদ্দেশ‍্য একটাই, উৎসব পালন করুন দুস্থদের সেবা করুন কিন্তু এই বিজাতীয় উৎসব ঘিরে মাতামাতির মত করে নিজেদের উৎসব নিয়ে মাতেন না কেন? স্বামীজির মত বিদেশীদের ভালো গুণ গুলি গ্রহণ করুন যীশুর জীবন থেকে যা যা শিক্ষনীয় তা নিন যেটা কখন‌ই আমরা করিনা। আমরা কেবল মদ মাংস নিয়েই ব‍্যাস্ত, ক্লাবে গিয়ে সান্টা প‍্যাটার্নের বিকিনি পরিহিতার সরু কোমর জড়িয়ে বেলেল্লাপনা করাটাই কি আমাদের শ্রেষ্ঠ উৎসব.?

ভারতবর্ষের বেশীরভাগ ইংরাজী মাধ‍্যম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেগুলির প্রধান দপ্তর বিদেশে এই ধরণের কোনো বিদ‍্যালয় বা মহাবিদ‍্যালয়ে বিদ‍্যার দেবী সরস্বতীর পূজা হয়না। ওরা আমাদে ধর্ম নিয়ে উৎসব নিয়ে মাতে না। ওখানে দশ দিন ছুটি দেওয়া হয় খ্রীস্টমাসের। তাহলে আমাদের এত সুড়সুড়ি কিসের ? যারা বলে আমরা পাপের ফসল যারা আমাদের বিচারধারাকেই সম্মান জানায় না তাদের উৎসব এত সমারোহে পালনের হেতু কি ? আমরা সব ধর্মের প্রতি প্রকৃত সহিষ্ণু তাই ওই উৎসব যাদের তারাই পালন করুক আমরা সহযোগিতা করবো অংশগ্রহণ করবো কিন্তু নিজেদের অস্তিত্ব ভুলে কখন‌ই নয়।

 আমার রাম আমার কৃষ্ণ আমার শিব কালি দুর্গা এরা কোন ক্ষতি করলো যে আজ চ‍্যারিটি করতে যীশুর প্রয়োজন পড়ছে ? সনাতন ধর্মকে পড়ুন জানুন দেখুন কত উদারতা কত সমরসতার কথা এই ধর্ম বলছে। যীশুর থেকে মুহম্মদের থেকে ভালোটা নিন । কিন্তু যুগে যুগে আমরা খারাপ গুলোই নিয়ে ফেলছি। শরীর সর্বস্ব‍্য প্রেম নিয়েছি ওদের থেকে, বাবাকে মাইনে পেয়ে মদ বা সিগারেট উপহার দেওয়া শিখেছি, গুরুজনদের না মানা শিখেছি, বৃদ্ধাশ্রম বানানো শিখেছি, রাস্তায় সকলকে দেখিয়ে শারিরীক উত্তেজনায় সাড়া দিতে শিখেছি, ধর্ষণ করতে শিখেছি, পোশাকে পরিবর্তন এনেছি কিন্তু বিদেশীদের একটাও ভালো জিনিস কি করেছি ? টেম্‌স্ নদী আজ গঙ্গার থেকেও স্বচ্ছ আমরা পারিনি গঙ্গা স্বচ্ছ করতে, আমরা পারিনি নিজের দেশকে স্বচ্ছ রাখতে, আমরা পারিনি ধর্ষণ রুখতে, আমরা পারিনি দুর্নিতী রুখতে, বিদেশে গীতা নিয়ে গবেষণা চলছে পাঠ‍্যপুস্তকে গীতা পড়ানো হচ্ছে কারণ ওরা সামনে যত‌ই আমাদের ছোট করুক না কেন আদতে আড়াইশো বছর আগেই তারা বুঝেছিল কি মধু আছে আমার সনাতনী শাস্ত্রে অথচ আমার দেশবাসী মনে করছে গীতা পড়ালে তা সাম্প্রদায়িকতা হবে। কিন্তু মাদ্রাসায় ও খৃষ্টান পরিচালিত ভারতীয় বিদ‍্যালয়ে কোরাণ বা বাইবেল চলতে পারে সরকারী বিদ‍্যালয়ে রামায়ণ, মহাভারত অচল।

সবশেষে বলব সকল ধর্মের মান‍্যতা করেই বলব হিন্দুরা নিজের ধর্মে বিশ্বাস রাখুন নিজের ধর্ম জানার চেষ্টা করুন। ভারত মাতার জয়।

Life's Amazing Secrets: How to Find Balance and Purpose in Your Life | Inspirational Zen book on motivation, self-development & healthy living

Stop going through life, Start growing through life!While navigating their way through Mumbai's horrendous traffic, Gaur Gopal Das and his wealthy young friend Harry get talking, delving into concepts ranging from the human condition to finding one's purpose in life and the key to lasting happiness. Whether you are looking at strengthening your relationships, discovering your true potential, understanding how to do well at work or even how you can give back to the world, Gaur Gopal Das takes us on an unforgettable journey with his precious insights on these areas of life. Das is one of the most popular and sought-after monks and life coaches in the world, having shared his wisdom with millions. His debut book, Life's Amazing Secrets, distils his experiences and lessons about life into a light-hearted, thought-provoking book that will help you align yourself with the life you want to live.


 


 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.